অংস। নূর ইসলাম।

অংস।
নূর ইসলাম। 

 

 
অংস।  নূর ইসলাম।  বাংলা কবিতা









ঠিক এমন। দুজন দুজনের কাধে ভর করে চলে। কে শিক্ষক কে ছাত্র বোঝা বড় দায়।

আমি সব সময় জানিয়াছি, শিক্ষক কেবল ছাত্রকে কাধে তুলে রাখে। সীমানা অতিক্রম করে নতূন স্বদেশ দেখায়।

কিন্তু, ছাত্র? সে কি গুরুকে অতিক্রম করিল?
বলছে, ওস্তাদ, দেখেন, আমি নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করেছি।

গুরু ত ছাত্রের নতুনত্ব দেখে অন্ধ বনে গেল। বলল, "ছাত্র, এবার মাদুর বিছাও। আমি বিশ্রাম নিব।"

ছাত্র কৌশল প্রয়োগ করিল। শিক্ষক যখন মহাঘুমে ব্যস্ত, তখন ছাত্র নিজেকে শিক্ষক দাবি করিল।

সকলে ভাবিল, শিক্ষক মহোদয় চিরনিদ্রায় শায়িত। ছাত্রকেই আমার শিক্ষক মানতে হবে।

যেহেতু শিক্ষক মহোদয় তাকে জ্ঞান দান করেছে, সেহেতু তাকে আমরা গুরু মানতে বাধ্য।

জনসাধারণের সন্তানগন তাকে শিক্ষক মানিয়া নিজেরা ছাত্র হইলো।

শিক্ষক যখন ঘুম থেকে উঠে বসলো এবং বলল, "কি করছো ছাত্র?"
ছাত্র বিনয়ের সাথে উত্তর দিলেন, "যেহেতু আপনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তাই কাউকে আপনার অভাব বুঝতে দেইনি।

শিক্ষক মহোদয় মহাখুশী! আমার ছাত্র আমার দায়িত্ব পালন করছে। সকল পরিশ্রম আজ সার্থক হয়েছে। শিক্ষক পালন করছে তার শিক্ষকের দায়িত্ব।

ছাত্র, খাবার কিছু দাও। যেহেতু চিন্তামুক্ত হলাম, তবে আর জেগে থাকার কি প্রয়োজন? আমি পুনরায় নিদ্রায় যাব।
ছাত্র বলিলেন, " কতদিন?"
শিক্ষক বলিলেন, দেহে প্রাণ যতদিন থাকে। প্রাণভোমরা উড়ে গেলে চিরনিদ্রায় শায়িত হব।

শিক্ষক শিক্ষকের মৃত্যু কামনা করে।
শিক্ষক এবিষয়ে অজ্ঞাত। তবুও ত শিক্ষক। জল খাবার খাওয়ায়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন।

শিক্ষক মহোদয় নিদ্রায় গেলেন তবে, চির নিদ্রায় না।

সাইনবোর্ডধারী শিক্ষক গুরুজনের দোহাই দিয়ে সকলকে আবেগের স্রোতে ভাসিয়ে ক্রসফায়ার করিল।

শিক্ষা গুরু নিশ্চিন্তে নিদ্রায়মাণ আর মুখোশধারী শিক্ষক অর্থাৎ সেই ছাত্র তার শিক্ষকের নাম ভেংগে অপকর্ম করায় ব্যস্ত।

একাধিক ছাত্রছাত্রী নতুন শিক্ষকের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করিল।
যেহেতু আমরা গুরুর ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করিতে পারিনি, সেহেতু শিক্ষক মহোদয়ের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে গুরুর জ্ঞান অর্জন করা উচিৎ।

শুরু হল সাহিত্য পাঠশালা।
শিক্ষকের নাম অসীম।
বর্তমান অবস্থান ঢাকায়।
আধুনিক এবং চঞ্চলতায় পরিপূর্ণ।
পেশায় ব্যবসায়ী।

একক পরিবারে জন্ম নিয়ে একক পরিবার গঠন করেছে। বাবা মা জীবিত নেই। গত হয়েছে বেশ কয়দিন হল। সদ্য জন্ম নেয়া সন্তান ও বউ মাসে দু একবার আসে ঢাকায়। দু একদিন থেকে আবার চলে যায়।

প্রায় সময় একা থাকতে হয় বাসায়। এদিকে বউয়ের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে অসীমের। কিছু করার নেই। অসীমের বউ যদি ঢাকায় এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, তবে মায়ের রাখা সম্পদ দেখাশোনা করবে কে!!

বাধ্য হয়ে অসীম একাই ঢাকায় দিন যাপন করতে লাগলো।
শিক্ষকের দেয়া জ্ঞান বিলিয়ে দিতে লাগলো সকল ছাত্রছাত্রীর মাঝে।

নিশ্চয়ই অবাক হবার বিষয়!
একজন ব্যবসায়ী কিভাবে শিক্ষাদান করবে!
অসম্ভব।

না, সম্ভব। কবি হতে হলে ডিগ্রী নেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু ভাবরস সমৃদ্ধ সরস বাক্য হলেই হল।
আর, গুরুজন ত আছেই!


 

 কবি-দের জোয়ার বইছে। ভাটি যাবে কখন বলা দায়। শিক্ষাগত ডিগ্রীর প্রয়োজন নেই সাহিত্যে। মৌ-মাছির ন্যায় বৃদ্ধি হচ্ছে কবি শব্দে।

এই ত গত বইমেলায় পরিচয়।
সে নাকি ক্লাস টু পাশ। এখন সে কবিতা লেখে না, কবিতা লেখা শেখায়।
সত্যি কথা এই যে, তার ফেসবুকে কখনো কবিতা দেখিনি।

দেখেছি, ছড়া। তাও অনেক আগে প্রকাশিত।

ত, আমি একদিন বললাম, ভাই, আপনি কি আর কবিতা লেখেন না?
উত্তরে বলল, " এখন আর কবিতা লেখার সময় কোথায়! জানেন, এখনো অনেকে টাকা দিয়ে রাখছে কবিতা লেখা শেখার জন্য।"
আমি বললাম, "তাই বলে শেখানোর আগেই টাকা নিয়ে রাখছেন!!"

কবি সাহেব বলিলেন, "না নিয়েও উপায় নেই। পিছু ছাড়ে না।"
এই কবি-কে তো ছাত্ররা পিছু ছাড়ে না কিন্তু, ইদানিং এমন শিক্ষকের জন্ম হয়েছে যে, দৈনিক একজন ছাত্র হাতে না নিলে নাকি রাতের ঘুম হয় না।

অসীম তার পাঠশালা উন্মুক্ত করিলেন।
নাম দিলেন,
কবি গুরু ওয়ালিউল্লাহ্ পাঠশালা।

গুরুর চরণে আমার এ জ্ঞান ভান্ডার।
একদা জ্ঞান অর্জন করে বিলিয়ে দাও সর্বস্তরে।

পাঠশালার দেয়ালে উল্লেখিত প্রতিটি বাক্য গুরুর বাণী।
শুধুমাত্র একটা রচনা পাঠশালার মুল ফটকএ টাংগানো আছে, যা দেখে গুরু প্রথম নিদ্রায় গিয়েছিলেন।
গুরু নিয়ে এতকিছু তবুও গুরুর বাক্য মুল ফটকে নেই কেন?

এবিষয়ে আমারও অজানা।

অসীম এক এক করে কবিতা প্রকাশ করা শুরু করলো সামাজিক প্রচার মাধ্যম ফেসবুকে।
এক এক করে পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বৃদ্ধি পেতে থাকে ফলোয়ার ও।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা যতটা সুযোগ সুবিধা উপভোগ করছি, তারচেয়ে যেন বেশি ক্ষতি হচ্ছে।
৫৫ বছরের বেশি বয়সী নারীকেও পেতে হয় ২০/২৫ বছর বয়সী পুরুষ হতে প্রাপ্ত সেক্স প্রস্তাব।

পূর্বের কথা যা জেনেছি বা দাদির মুখে শুনেছি, তাতে করে একজন বা মহিলা একে অপরের সাথে কথা বলা ত দুরের কথা! কেউ কারো দিকে তাকাতো না।
আর এখন??
আর এখন! মন চাইলেই,,,,,

হাই, হ্যালো, কেমন আছো?

 

 

চলবে........

Next Post
No Comment
Add Comment
comment url